সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
জলাবদ্ধতা ও অতিবর্ষণে কয়েক বছর ধরেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষক। নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও ভারি বর্ষণের কারণে গেল আমন মৌসুমে ফসল ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক। এ নিয়ে কষ্টের সীমা ছিল না তাদের। অনেক আশা নিয়ে এবার বোরো চাষ করেছেন আমন হারা কৃষক।
বোরোধানের ক্ষেতে চির সবুজের বুকে সোনালী রঙের আল্পনায় হাসি ফুটেছিল কৃষকের মুখে। আধঁপাকা ধান দেখে কৃষকের মন দুলেছিল আনন্দে। কিন্তু গোলায় তোলার আগেই সেই ধানে মই দিয়েছে বৈশাখী ঝড় আর মৌসুমি বৃষ্টি। অনেকেই ধান কর্তন করে মাঠে রোদে শুকাচ্ছিলেন। বৃষ্টির পানিতে সেই কাটা ধান ভাসছে। গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টিতে ধুয়ে যেতে বসেছে কৃষকের স্বপ্ন। তাদের উৎপাদিত কাটা ধান এখন পনিতে ভাসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে আবহাওয়া অফিস থেকে খবর দেওয়া হয়েছে আগামী ৫ দিন দেশের বিভিন্নস্থানে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। এতে কৃষকের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৈত্রের শেষে ও বৈশাখের প্রথমে ধান কাটার মৌসুম। অধিকাংশ কৃষক ধান কেটে শুকানো ও আঁটি বাঁধার জন্য মাঠে ফেলে রাখেন। বৃহস্পতিবার বিকালে ও শুক্রবার থেকে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে ধানের জমিতে পানি জমে গেছে। অধিকাংশ ধানের জমিতে এখন পানি থৈ থৈ করছে। তালা উপজেলা মহান্দী গ্রামের আরশাদ হোসেন ও হানিফ মল্লিক জানান, ধান চাষ করতে বীজতলা তৈরী থেকে শুরু করে ধান রোপন, পানি সেচ, আগাছা পরিস্কার, সার ও কীটনাশক বাবদ প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা।
প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয় ২০ থেকে ২২ মণ ধান। এখন ধান কাটার সময়। মৌসুমে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল। তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, উপজেলাতে ১৯১৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৩% জমিতে ধান কাটা হয়েছে। যে পরিমান বৃষ্টি হয়েছে তাতে ক্ষতি হলেও ব্যাপক হবে না। তবে যদি বৃষ্টি আরও ২-৩ দিন স্থায়ী হয় তাহলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮০ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সাতক্ষীরায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন তীব্র গরম উপেক্ষা করে কৃষকেরা বোরো ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে ধান কাটতে শ্রমিক সংকটে ভুগছেন কৃষকেরা।
তথ্যসূত্রে, সাতক্ষীরার সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ২৬০ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ১২ হাজার ৬৬০ হেক্টর, তালা উপজেলায় ১৯ হাজার ১৫৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ৬ হাজার ১২৫ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ৯ হাজার ৩৪০ হেক্টর, শ্যামনগর উপজেলায় ২৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে উপসহকারী মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসারদের গণনায় দেখা গেছে সাতক্ষীরায় ৮০ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ বিষয়ে কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এবার ধানে চিটা নেই বললেই চলে, ফলনও খুব ভালো হয়েছ। আমরা প্রতিবিঘা জমিতে ২৭ থেকে ৩০ মণ ধান হয়েছে। কিন্তু মৌসুমি ঝড় আর বৃষ্টি তাদের পাকাধানে মই দিয়েছে বলে জানান। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলার বোরো ধান চাষীদের সব ধরনের পরামর্শ সেবা প্রদান করছে মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
